06 Apr
06Apr

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) আধুনিক বিশ্বে একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এটি চিকিৎসা, শিক্ষা, শিল্প এবং দৈনন্দিন জীবনে আমাদের জন্য অনেক সুবিধা এনেছে। কিন্তু এই প্রযুক্তির উজ্জ্বল দিকের পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসে—AI কি সমাজে বৈষম্য বাড়াতে পারে? 

বৈষম্য শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং সুযোগের দিক থেকেও হতে পারে। 

এই নিবন্ধে আমরা দেখব কীভাবে AI-এর পক্ষপাত, অর্থনৈতিক প্রভাব এবং সামাজিক বিভাজন সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারে।


AI-এর পক্ষপাত এবং বৈষম্য
AI সিস্টেমগুলো যে ডেটার উপর নির্ভর করে, সেই ডেটা যদি পক্ষপাতদুষ্ট হয়, তবে AI-ও পক্ষপাতিত্ব দেখাবে। 

উদাহরণস্বরূপ, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় AI ব্যবহার করা হলে, যদি এর প্রশিক্ষণ ডেটা শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়, তবে অন্য গোষ্ঠীগুলো বাদ পড়তে পারে। এটি জাতি, লিঙ্গ বা অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতে বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারে। 

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু AI মুখ শনাক্তকরণ সফটওয়্যার গাঢ় ত্বকের মানুষদের চিনতে ব্যর্থ হয়, যা পক্ষপাতের একটি স্পষ্ট উদাহরণ। এভাবে AI সমাজে বিদ্যমান বৈষম্যকে আরও গভীর করতে পারে।


অর্থনৈতিক বৈষম্য
AI-এর অটোমেশন ক্ষমতা অনেক শিল্পে বিপ্লব ঘটাচ্ছে, কিন্তু এটি চাকরির বাজারে বড় প্রভাব ফেলছে। যারা নিম্ন-দক্ষতার কাজ করেন—যেমন কারখানার শ্রমিক বা ড্রাইভার—তাদের চাকরি AI-চালিত মেশিন বা স্বয়ংচালিত গাড়ির কারণে হুমকির মুখে পড়ছে। 

অন্যদিকে, যারা প্রযুক্তি-দক্ষ, তারা AI-এর সুবিধা নিয়ে আরও উন্নতি করছে। ফলে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান বাড়ছে। 

উদাহরণস্বরূপ, যেসব দেশে AI-এর প্রযুক্তি উন্নত, সেখানে অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে, কিন্তু অনুন্নত দেশগুলো পিছিয়ে পড়ছে। এটি বিশ্বব্যাপী বৈষম্য বাড়াচ্ছে।


সামাজিক বিভাজন
AI-এর সুবিধা সবাই সমানভাবে পায় না। যাদের কাছে প্রযুক্তির অ্যাক্সেস আছে, তারা এর সুবিধা ভোগ করছে, কিন্তু যারা প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত—যেমন গ্রামীণ এলাকার মানুষ বা নিম্ন-আয়ের পরিবার—তারা পিছিয়ে পড়ছে। 

শিক্ষায় AI-চালিত টুল ব্যবহার হচ্ছে, কিন্তু যাদের ইন্টারনেট বা স্মার্ট ডিভাইস নেই, তারা এই সুযোগ থেকে বাদ পড়ছে। 

এছাড়া, AI যদি ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে শুধুমাত্র ধনীদের সুবিধার জন্য ব্যবহার করে—যেমন ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন বা সেবা—তবে দরিদ্ররা আরও প্রান্তিক হয়ে যাবে। এটি সমাজে একটি ‘ডিজিটাল বিভাজন’ তৈরি করছে।


ভবিষ্যৎ প্রভাব
ভবিষ্যতে AI যদি আরও শক্তিশালী হয়, তবে বৈষম্য আরও বাড়তে পারে। 

উদাহরণস্বরূপ, যদি AI স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবহৃত হয়, তবে যারা ব্যয়বহুল AI-চালিত চিকিৎসা কিনতে পারে, তারা উন্নত সেবা পাবে, আর অন্যরা পিছিয়ে থাকবে। 

একইভাবে, AI যদি সরকারি নীতি বা আইন প্রয়োগে ব্যবহৃত হয় এবং পক্ষপাতদুষ্ট হয়, তবে নির্দিষ্ট গোষ্ঠী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হতে পারে। এটি সমাজে অস্থিরতা এবং বিভেদ বাড়াতে পারে।


সমাধানের উপায়
এই বৈষম্য কমাতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। প্রথমত, AI-এর ডেটা পক্ষপাতমুক্ত হওয়া উচিত। 

দ্বিতীয়ত, সবার জন্য প্রযুক্তির অ্যাক্সেস নিশ্চিত করতে হবে—যেমন, গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট সুবিধা বাড়ানো। 

তৃতীয়ত, AI-এর উন্নয়নে নৈতিক নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে, যাতে এটি সবার কল্যাণে ব্যবহৃত হয়। সরকার এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে একসঙ্গে কাজ করে এই সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে।


উপসংহার
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সমাজের জন্য একটি বরদান হতে পারে, কিন্তু এটি বৈষম্য বাড়ানোর ঝুঁকিও রাখে। পক্ষপাত, অর্থনৈতিক বিভাজন এবং সামাজিক বৈষম্যের মাধ্যমে AI আমাদের সমাজকে আরও বিভক্ত করতে পারে। 

তবে সঠিক নিয়ন্ত্রণ ও পরিকল্পনার মাধ্যমে আমরা এটিকে সবার জন্য উপকারী করে তুলতে পারি।

মন্তব্য
* ইমেলটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে না।