ইন্টারনেট আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। প্রথম প্রজন্মের (১জি) অ্যানালগ সংযোগ থেকে শুরু করে ৫জি-এর উচ্চ গতি এবং স্মার্ট সংযোগ পর্যন্ত, প্রতিটি প্রজন্ম আমাদের জীবনকে নতুনভাবে গড়ে তুলেছে।
আজ, ৮ এপ্রিল ২০২৫, আমরা ৫জি-এর সুবিধা উপভোগ করছি, কিন্তু বিশ্ব ইতিমধ্যে ৬জি নেটওয়ার্কের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ৬জি, যা ষষ্ঠ প্রজন্মের ওয়্যারলেস প্রযুক্তি, ইন্টারনেটের পরবর্তী বিপ্লব হিসেবে আবির্ভূত হবে।
এই নিবন্ধে আমরা আলোচনা করব ৬জি কীভাবে আমাদের সংযোগ, জীবনযাত্রা এবং প্রযুক্তির জগৎকে বদলে দেবে।
৬জি হলো ৫জি-এর উত্তরসূরি, যা ২০৩০ সালের কাছাকাছি বাণিজ্যিকভাবে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি ITU-R-এর IMT-2030 ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে বিকশিত হচ্ছে। ৫জি যেখানে উচ্চ গতি এবং কম লেটেন্সি (বিলম্ব) প্রদান করে, ৬জি সেখানে আরও এগিয়ে গিয়ে অতি-উচ্চ গতি, সর্বব্যাপী সংযোগ, এবং বুদ্ধিমান নেটওয়ার্কের প্রতিশ্রুতি দেয়।
৬জি টেরাহার্টজ (THz) ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করবে, যা ১০০ গিগাবিট প্রতি সেকেন্ড (Gbps) থেকে ১ টেরাবিট প্রতি সেকেন্ড (Tbps) পর্যন্ত গতি প্রদান করতে পারে—৫জি-এর তুলনায় প্রায় ১০০ গুণ দ্রুত।
৬জি-এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হবে এর অতুলনীয় গতি। একটি ৪কে ভিডিও যেখানে ৫জি-তে কয়েক সেকেন্ডে ডাউনলোড হয়, ৬জি-তে তা মুহূর্তের মধ্যে সম্পন্ন হবে। এই গতি শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং বড় ডেটা ট্রান্সফার, যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) মডেল প্রশিক্ষণ বা রিয়েল-টাইম সিমুলেশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
৬জি সর্বব্যাপী সংযোগ (ubiquitous connectivity) নিশ্চিত করবে। এটি গ্রামীণ এলাকা, শহর, এমনকি সমুদ্র ও আকাশেও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সরবরাহ করবে। স্যাটেলাইট এবং ড্রোনের সমন্বয়ে ৬জি নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে, যা ডিজিটাল বিভাজন কমাতে সাহায্য করবে।
৬জি শুধু দ্রুত নয়, বুদ্ধিমানও হবে। AI-এর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে এটি নেটওয়ার্ককে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালনা করবে।
উদাহরণস্বরূপ, ৬জি নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী ব্যান্ডউইথ বরাদ্দ করবে—আপনি যদি ভিডিও স্ট্রিমিং করেন, তবে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে গতি বাড়াবে।
৬জি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আমূল বদলে দেবে।
৬জি স্বাস্থ্যসেবায় বিপ্লব ঘটাবে। রিয়েল-টাইমে রোবটিক সার্জারি, যেখানে ডাক্তাররা দূর থেকে অপারেশন করবেন, ৬জি-এর কম লেটেন্সির জন্য সম্ভব হবে।
৬জি টেলিমেডিসিনকে আরও উন্নত করবে।শিল্পে, ৬জি স্বয়ংচালিত যানবাহন এবং স্মার্ট কারখানার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
উদাহরণস্বরূপ, স্বয়ংচালিত গাড়িগুলো ৬জি-এর মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করবে, যা দুর্ঘটনা কমাবে।
৬জি শক্তি-দক্ষ নেটওয়ার্ক হিসেবে ডিজাইন করা হচ্ছে। এটি কার্বন নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করবে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে, টেরাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি এবং নতুন অবকাঠামোর জন্য প্রচুর শক্তি এবং সম্পদ প্রয়োজন হতে পারে, যা পরিবেশের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
৬জি-এর সম্ভাবনার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
৬জি শুধু ইন্টারনেটের গতি বাড়াবে না, বরং একটি সম্পূর্ণ সংযুক্ত বিশ্ব তৈরি করবে। এটি “ইন্টারনেট অফ এভরিথিং” (IoE)-কে বাস্তবে রূপ দেবে, যেখানে প্রতিটি ডিভাইস, মানুষ এবং পরিবেশ একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। ভারতে, যেখানে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে, ৬জি ডিজিটাল অর্থনীতি এবং উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করবে।
৬জি নেটওয়ার্ক ইন্টারনেটের পরবর্তী বিপ্লব হিসেবে আবির্ভূত হবে, যা গতি, সংযোগ, এবং বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে আমাদের জীবনকে বদলে দেবে। এটি স্মার্ট শহর, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা, এবং নতুন শিল্পের দ্বার উন্মোচন করবে। তবে, এর সুবিধা গ্রহণ করতে হলে আমাদের নিরাপত্তা, অবকাঠামো, এবং নৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। ৬জি শুধু একটি প্রযুক্তি নয়, বরং একটি নতুন যুগের সূচনা।