ইউক্রেন, ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ, তার সমৃদ্ধ ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মিশ্রণে গঠিত। একসময় প্রাচীন কিয়েভান রাসের অংশ হিসেবে খ্রিস্টান সভ্যতার ভিত্তি স্থাপনকারী এই দেশটি বর্তমানে এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র। কিয়েভের বিশাল গির্জা, লভিভের ঐতিহাসিক স্থাপত্য এবং ওডেসার সমুদ্র উপকূল, প্রতিটি পর্যটকের জন্য কিছু না কিছু মজার অভিজ্ঞতা এনে দেয়।
ইউক্রেন একটি বিশাল দেশ, যার পূর্ব সীমান্ত রাশিয়া, পশ্চিমে পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, এবং হাঙ্গেরি, উত্তরে বেলারুশ এবং দক্ষিণে কৃষ্ণ সাগরের সাথে মিলিত। ইউক্রেনের বিস্তৃত ভূমির কারণে এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। দেশটির কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণাঞ্চলীয় সমতলভূমি এবং পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য অঞ্চল কৃষি এবং বন্যপ্রাণীর জন্য বিখ্যাত।
কার্পাথিয়ান পর্বতমালা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শন এবং ভ্রমণকারীদের জন্য হাইকিং, ট্রেকিং এবং স্কি করার জন্য আদর্শ স্থান। এছাড়া ইউক্রেনের বিভিন্ন জাতীয় উদ্যান এবং সংরক্ষিত অঞ্চলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
ইউক্রেনের ইতিহাস হাজার বছরেরও বেশি পুরানো। খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত কিয়েভান রাস ছিল প্রথম পূর্ব স্লাভিক রাজ্য এবং এর সাথে খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তন সারা পূর্ব ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। কিয়েভান রাসের উত্তরসূরি হিসাবে কিয়েভ এবং অন্যান্য ইউক্রেনীয় শহরগুলো ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে।
ইউক্রেনের সেন্ট সোফিয়া ক্যাথেড্রাল এবং পেচার্স্ক লাভরা খ্রিস্টান স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। এই দুটি স্থাপনা কিয়েভের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে।
লভিভ শহর তার মধ্যযুগীয় স্থাপত্য এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত। লভিভের বিভিন্ন রেনেসাঁ, বারোক এবং নিওক্লাসিক স্থাপত্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এখানকার ক্যাফে সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যবাহী উৎসব পর্যটকদের কাছে বিশেষভাবে আকর্ষণীয়।
ইউক্রেনের বর্তমান সময়ের পরিবর্তন এবং আধুনিকতার ছোঁয়া স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়। প্রযুক্তি, শিল্প, এবং শিক্ষায় দেশটি প্রতিনিয়ত অগ্রসর হচ্ছে। দেশের রাজধানী কিয়েভ ইউক্রেনের আধুনিকতার প্রতীক। এখানে উঁচু বিল্ডিং, আধুনিক শপিং মল, এবং হোটেলগুলির পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী গির্জা এবং প্রাচীন স্থাপত্য একে এক আকর্ষণীয় শহরে পরিণত করেছে।
ওডেসা কৃষ্ণ সাগরের তীরে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নগরী, যা আধুনিক ইউক্রেনের বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ওডেসার সমুদ্রসৈকত এবং পুরাতন স্থাপত্যগুলো পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষণীয় স্থান।
ইউক্রেন তার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বছরের বিভিন্ন সময়ে অনেক ঐতিহ্যবাহী উৎসব উদযাপন করা হয়। মাল্যাঙ্কা, যা নতুন বছরের প্রাক্কালে উদযাপিত হয়, তার নাচ, সঙ্গীত এবং লোক ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও হোরোভোড, এক ধরণের লোকনৃত্য, এবং পিসাঙ্কা অর্থাৎ রঙিন ডিমের শিল্প ইউক্রেনীয় সংস্কৃতির অংশ।
ইউক্রেনীয় ভিজংকা এবং বরশ্চ (বিটের স্যুপ) এর মতো ঐতিহ্যবাহী খাবার এখানে খুব জনপ্রিয়। ইউক্রেনীয় সংস্কৃতির অন্যতম বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এখানে প্রতিটি অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন রীতি-নীতি এবং উৎসব রয়েছে, যা পর্যটকদের জন্য বিশেষ অভিজ্ঞতা।
ইউক্রেন সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল এবং পূর্ব ইউক্রেনের সংঘাতের কারণে দেশের স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এই সংঘাতের মধ্যেও ইউক্রেনের মানুষ তাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। দেশটির জনগণ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং শান্তি স্থাপনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে।
যারা ইউক্রেন ভ্রমণে আগ্রহী, তাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
ইউক্রেন তার ঐতিহাসিক গৌরব, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং আধুনিক উন্নয়নের জন্য বিখ্যাত। দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্যবাহী খাবার এবং বন্যপ্রাণী পর্যটকদের আকর্ষণ করে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক ও সামরিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, ইউক্রেন তার নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে বজায় রেখে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এগিয়ে চলেছে।