05 Sep
05Sep

ইরাক একটি প্রাচীন সভ্যতার কেন্দ্রস্থল, যা মেসোপটেমিয়ার সুমেরিয়ানদের জন্মভূমি হিসেবে পরিচিত। প্রাচীন ইতিহাস, সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনের কারণে ইরাক পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়। তার পাশাপাশি ইরাকের দর্শনীয় স্থান এবং আধুনিক স্থাপত্যগুলিও ভ্রমণকারীদের মুগ্ধ করে।

ইরাকের ইতিহাস

ইরাকের ইতিহাস শুরু হয় প্রায় ৪০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, যখন মেসোপটেমিয়ার সভ্যতা গড়ে ওঠে। এটি বিশ্বের প্রথম সভ্যতার অন্যতম ছিল এবং এখানেই চাকা, লেখার কৌশল এবং প্রাচীন আইনকানুনের উদ্ভব হয়। মেসোপটেমিয়া শব্দটি এসেছে "নদীর মধ্যে ভূমি" থেকে, যা টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মধ্যে অবস্থিত।সুমেরিয়ানরা ছিল ইরাকের প্রথম সভ্য জাতি, যারা জিগারাট নামক ধাপে ধাপে তৈরি বিশাল মন্দির নির্মাণ করেছিল। এ সভ্যতার পরেই আসে ব্যাবিলনীয় এবং অ্যাসিরিয়ান সভ্যতা, যারা ইরাককে সমৃদ্ধ ও উন্নত করেছিল। হ্যামুরাবির আইন (ব্যাবিলনীয় আইন) এবং অ্যাসিরিয়ান সাম্রাজ্য এই সময়ের প্রধান ঐতিহাসিক ঘটনা।ইসলামিক যুগের আগমনের পর ইরাক খলিফা হারুন আল রশিদের অধীনে স্বর্ণযুগ উপভোগ করে। বাগদাদ সেই সময় ইসলামের সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্র ছিল। তবে মঙ্গোল আক্রমণ এবং সাম্প্রতিক সময়ের যুদ্ধবিগ্রহ ইরাকের অবকাঠামো এবং অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

ইরাক ভ্রমণ


দর্শনীয় স্থান

ইরাকের পর্যটন শিল্প ধীরে ধীরে পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে, এবং এর ঐতিহাসিক স্থানগুলি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এখানে প্রাচীন সভ্যতা থেকে শুরু করে ইসলামিক স্থাপত্য পর্যন্ত অনেক কিছু দেখার আছে।

  1. বাবিলন: প্রাচীন ব্যাবিলনীয় সভ্যতার রাজধানী, যা হ্যামুরাবির কোড এবং নেবুচাদনেজারের হ্যাংগিং গার্ডেনের জন্য বিখ্যাত। এই স্থাপনাগুলি ইতিহাসের এক অমূল্য অংশ হিসেবে বিবেচিত।
  2. জিগারাট অব উর: সুমেরিয়ান সভ্যতার সময় নির্মিত একটি ধাপযুক্ত পিরামিড, যা মেসোপটেমিয়ার সবচেয়ে বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম। এটি ঈশ্বরদের পূজার স্থান ছিল।
  3. ইমাম আলি মসজিদ, নাজাফ: শিয়া মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র স্থান, যেখানে ইমাম আলি’র সমাধি রয়েছে। মসজিদটির সৌন্দর্য এবং এর সোনার গম্বুজ বিশেষভাবে পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
  4. বাগদাদ: ইরাকের রাজধানী এবং একসময় ইসলামিক স্বর্ণযুগের কেন্দ্রবিন্দু। এখানে প্রাচীন মসজিদ, স্থাপত্য এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলি পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
  5. মসুলের প্রাচীন শহর: মসুল শহরের প্রাচীন অঞ্চলটি তার মসজিদ, বাজার এবং পুরনো স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত। এটি টাইগ্রিস নদীর তীরে অবস্থিত এবং অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে।
  6. কারবালা: শিয়া মুসলিমদের জন্য আরেকটি পবিত্র স্থান, যেখানে ইমাম হুসাইন-এর সমাধি রয়েছে। কারবালা বিশ্বের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্র।
  7. হিত্রা: একটি প্রাচীন পার্থীয় শহর, যা ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত। এর প্রাচীন স্থাপত্য এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পর্যটকদের কাছে বড় আকর্ষণ।

ভ্রমণ গাইড

ইরাক ভ্রমণের সময় পর্যটকদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মনে রাখা প্রয়োজন। দেশটি ধীরে ধীরে পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে এবং পর্যটনের জন্য নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

  1. যাতায়াত: ইরাকে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের জন্য বাস এবং গাড়ি ভাড়া করা সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। বড় শহরগুলিতে ট্যাক্সি পরিষেবা উপলব্ধ, তবে নিরাপত্তার জন্য সরকারি বা প্রামাণ্য ট্যাক্সি ব্যবহার করা উচিত।
  2. মৌসুম: ইরাকে ভ্রমণের জন্য শীতকাল (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) সবচেয়ে উপযুক্ত সময়, কারণ এ সময় আবহাওয়া শীতল ও আরামদায়ক থাকে।
  3. খাবার: ইরাকের স্থানীয় খাবারগুলি খুবই সুস্বাদু। কাবাব, সমোসা, এবং বিভিন্ন মিষ্টান্ন জনপ্রিয়। স্থানীয় বাজারে ভিন্ন ধরনের খেজুর পাওয়া যায়, যা পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।
  4. সংস্কৃতি ও নিরাপত্তা: ইরাকের মানুষ খুবই অতিথিপরায়ণ এবং ভ্রমণকারীদের সম্মান করে। তবে স্থানীয় শিষ্টাচার এবং ধর্মীয় বিধি মেনে চলা আবশ্যক।
  5. ভিসা: বেশিরভাগ দেশের পর্যটকদের ইরাকে প্রবেশের জন্য ভিসার প্রয়োজন হয়। ইরাকি ভিসার জন্য স্থানীয় দূতাবাস বা কনস্যুলেটে আবেদন করতে হবে।

ইরাকের প্রাচীন সভ্যতা, ধর্মীয় পবিত্র স্থান এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের জন্য একটি অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে। যদিও কিছু জায়গায় ভ্রমণ করার আগে নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন, তবুও ইরাক তার প্রাচীন ইতিহাসের মহিমা নিয়ে অপেক্ষা করছে।

মন্তব্য
* ইমেলটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে না।