গ্রীনল্যান্ড, পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপ, যা আর্কটিক এবং উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত। বরফে আচ্ছাদিত এই দেশটি তার বিস্ময়কর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বৈচিত্র্যময় প্রাণীজগৎ এবং আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য বিখ্যাত। আর্কটিক আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে বসবাসকারী মানুষদের ইতিহাস এবং গ্রীনল্যান্ডের অনন্য ভূগোল এটিকে এক অনন্য ভ্রমণ গন্তব্যে পরিণত করেছে।
ইতিহাস
- প্রাচীন ইতিহাস: গ্রীনল্যান্ডের প্রথম বসবাসকারীরা প্রায় ৪৫০০ বছর আগে আর্কটিক অঞ্চলের বিভিন্ন শিকারি জাতির অন্তর্ভুক্ত ছিল। থুলে এবং ডরসেট সংস্কৃতির প্রাচীন মানুষরা এই দ্বীপে বসবাস করেছিল। তারা মূলত সীল, তিমি, এবং অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর শিকার করে জীবনধারণ করত।
- নরওয়েজীয় এবং ভাইকিং যুগ: গ্রীনল্যান্ডে ইউরোপীয়দের আগমন ঘটে ১০ম শতাব্দীতে, যখন ইরিক দ্য রেড নামে একজন নরওয়েজীয় অভিযাত্রী প্রথম গ্রীনল্যান্ডে এসে বসতি স্থাপন করেন। তিনি ৯৮৫ সালে নরওয়ের নির্বাসন থেকে বাঁচার জন্য এখানে আসেন এবং গ্রীনল্যান্ডকে একটি নতুন বাসযোগ্য স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। এরিক দ্য রেডের নেতৃত্বে প্রথম ইউরোপীয় বসতি স্থাপন করা হয়, যা প্রায় ৫০০ বছর ধরে টিকে ছিল।
- ড্যানিশ উপনিবেশ: ১৮১৪ সালে কিয়েল চুক্তির পর, গ্রীনল্যান্ড ডেনমার্কের অংশ হয়ে ওঠে এবং ধীরে ধীরে ড্যানিশ উপনিবেশ হিসেবে বিকাশ লাভ করে। ডেনমার্কের শাসনের অধীনে, গ্রীনল্যান্ড ধীরে ধীরে আধুনিকীকরণের পথে অগ্রসর হয়, যদিও ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত এটি একটি উপনিবেশ হিসেবে থেকে যায়।
- আধুনিক যুগ: ১৯৭৯ সালে গ্রীনল্যান্ডকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হয়, এবং ২০০৯ সালে আরও স্বাধীনতা প্রদান করা হয়। বর্তমানে গ্রীনল্যান্ড ডেনমার্কের রাজ্যের অংশ হলেও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এটি প্রায় সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করে।

দর্শনীয় স্থান
- ইলুলিসাত আইসফিয়র্ড: গ্রীনল্যান্ডের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত ইলুলিসাত আইসফিয়র্ড ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত। এটি বিশাল বরফখণ্ড এবং হিমবাহের জন্য বিখ্যাত, যা প্রতি বছর পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
- কাপিসাল্লিট: গ্রীনল্যান্ডের অন্যতম ছোট্ট শহর কাপিসাল্লিট তার ঐতিহ্যবাহী গ্রিনল্যান্ডিক জীবনযাত্রার জন্য বিখ্যাত। এটি একটি নিরিবিলি শহর, যা আপনাকে গ্রীনল্যান্ডের প্রকৃতি এবং সংস্কৃতির গভীরে প্রবেশ করতে সাহায্য করবে।
- কুলুসুক: কুলুসুক গ্রীনল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি শহর, যেখানে প্রচুর অ্যাডভেঞ্চার এবং হাইকিং এর সুযোগ রয়েছে। এখানে আপনি ঐতিহ্যবাহী ইনুইট গ্রাম এবং স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে পারবেন।
- সারমিয়ুট সোয়াম্প: গ্রীনল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত সারমিয়ুট সোয়াম্প তার চমৎকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং আর্কটিক জীবজগতের জন্য বিখ্যাত। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির আর্কটিক পাখি এবং জীবজন্তু দেখা যায়।
- নুক: গ্রীনল্যান্ডের রাজধানী নুক তার আধুনিক স্থাপত্য, মিউজিয়াম, এবং ঐতিহ্যবাহী গ্রিনল্যান্ডিক সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। এখানে জাতীয় জাদুঘরসহ বিভিন্ন স্থানীয় শিল্পকর্ম প্রদর্শনী দেখতে পাওয়া যায়।
ভ্রমণ গাইড
- ভিসা এবং ভ্রমণ অনুমতি: গ্রীনল্যান্ডে ভ্রমণ করার জন্য ডেনমার্কের ভিসা প্রয়োজন। তবে যাদের কাছে শেঙ্গেন ভিসা আছে, তারা গ্রীনল্যান্ডে ভ্রমণ করতে পারবেন।
- পরিবহন ব্যবস্থা: গ্রীনল্যান্ডে অভ্যন্তরীণ বিমান যোগাযোগ বেশ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দেশটির সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সীমিত। এছাড়া কায়াক, স্নোমোবাইল এবং হেলিকপ্টার ব্যবহার করে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করা যায়।
- আবহাওয়া: গ্রীনল্যান্ডের আবহাওয়া সাধারণত ঠান্ডা, বিশেষ করে শীতকালে। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা কিছুটা উষ্ণ হয়, যা পর্যটকদের জন্য ভ্রমণের আদর্শ সময়।
- স্থানীয় ভাষা: গ্রীনল্যান্ডের প্রধান ভাষা হল গ্রীনল্যান্ডিক (কালাল্লিসুত), তবে ড্যানিশ এবং ইংরেজি ভাষাও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
- মুদ্রা এবং ব্যয়: গ্রীনল্যান্ডে ডেনমার্কের মুদ্রা, ক্রোন ব্যবহার করা হয়। গ্রীনল্যান্ডে থাকার খরচ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় কিছুটা বেশি, বিশেষ করে খাবার এবং পরিবহনের ক্ষেত্রে।