গ্রীস, ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে অবস্থিত একটি প্রাচীন সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু। এটি পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের উদ্ভবস্থল। প্রাচীন স্থাপত্য, দর্শন, এবং সাহিত্য থেকে শুরু করে মনোরম সমুদ্র সৈকত এবং পাহাড়ি অঞ্চল, গ্রীস পর্যটকদের জন্য এক অসাধারণ গন্তব্য।
ইতিহাস
- প্রাচীন গ্রীস: গ্রীসের ইতিহাসের মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রীক সভ্যতা, যা খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই সভ্যতা দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, এবং সাংস্কৃতিক অগ্রগতির জন্য বিখ্যাত। সক্রেটিস, প্লেটো, এবং অ্যারিস্টটলের মতো দার্শনিকরা এখানকার বুদ্ধিবৃত্তিক ধারা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
- ম্যাসেডোনিয়ান সাম্রাজ্য: আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের নেতৃত্বে গ্রীস ম্যাসেডোনিয়ান সাম্রাজ্যের অধীনে আসে এবং পশ্চিম এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। আলেকজান্ডারের সাম্রাজ্য গ্রীক সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞানকে বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়।
- রোমান যুগ: খ্রিস্টপূর্ব ১৪৬ সালে গ্রীস রোমান সাম্রাজ্যের অধীনস্থ হয়। রোমান সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে গ্রীক সংস্কৃতি ও সাহিত্য বিকাশ লাভ করে এবং রোমান আইনের সাথে মিশ্রিত হয়।
- অটোমান শাসন: ১৫০০ শতকের শুরুতে গ্রীস অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে যায় এবং প্রায় ৪০০ বছর অটোমান শাসনের অধীনে থাকে। এই সময়কাল গ্রীসের জন্য ছিল একটি অন্ধকারময় যুগ।
- স্বাধীনতা এবং আধুনিক গ্রীস: ১৮২১ সালে গ্রীক স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়, যা ১৮২৯ সালে গ্রীসের স্বাধীনতার সাথে শেষ হয়। এরপর গ্রীস একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ধীরে ধীরে আধুনিক যুগে প্রবেশ করে।

দর্শনীয় স্থান
- অ্যাক্রোপোলিস: এথেন্সের কেন্দ্রে অবস্থিত অ্যাক্রোপোলিস প্রাচীন গ্রীক স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। এটি পার্থেনন সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরের স্থান, যা প্রাচীন গ্রীক ধর্মের কেন্দ্রবিন্দু ছিল।
- মাইসিনাই এবং এপিডাউরাস: পেলোপনেসের এই স্থানগুলি প্রাচীন গ্রীক সভ্যতার প্রমাণবাহী। মাইসিনাইয়ের প্রাসাদ এবং এপিডাউরাসের থিয়েটার উভয়ই ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত।
- স্যান্টোরিনি: স্যান্টোরিনি দ্বীপ তার নীল গম্বুজযুক্ত সাদা ঘর এবং মনোরম সূর্যাস্তের জন্য বিখ্যাত। এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র, যেখানে বহু প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ এবং সমুদ্র সৈকত রয়েছে।
- ডেলফি: ডেলফি প্রাচীন গ্রীক ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। এটি অ্যাপোলো মন্দিরের জন্য বিখ্যাত এবং প্রাচীনকালে এখানে ওরাকল বসবাস করত, যার মাধ্যমে দেবতার ভবিষ্যদ্বাণী জানানো হত।
- মাউন্ট অলিম্পাস: এটি প্রাচীন গ্রীকদের কাছে দেবতাদের বসবাসস্থল হিসেবে পরিচিত ছিল। বর্তমানে, মাউন্ট অলিম্পাস একটি জনপ্রিয় হাইকিং গন্তব্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।
ভ্রমণ গাইড
- ভিসা এবং ভ্রমণ অনুমতি: গ্রীস একটি শেঙ্গেন অঞ্চলভুক্ত দেশ। শেঙ্গেন ভিসা আছে এমন পর্যটকরা এখানে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারবেন।
- পরিবহন ব্যবস্থা: গ্রীসে বাস, ট্রেন, এবং বিমান সার্ভিসের মাধ্যমে সহজেই যাতায়াত করা যায়। এছাড়া দ্বীপগুলির মধ্যে ফেরি সার্ভিসও রয়েছে।
- আবহাওয়া: গ্রীসে প্রধানত ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বিরাজমান। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা উষ্ণ এবং শুষ্ক থাকে, এবং শীতকালে তাপমাত্রা কিছুটা কমে যায়। গ্রীষ্মকাল ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়।
- স্থানীয় ভাষা: গ্রীসে গ্রিক ভাষা প্রচলিত, তবে অধিকাংশ পর্যটন স্থানে ইংরেজি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।
- মুদ্রা এবং ব্যয়: গ্রীসের মুদ্রা হল ইউরো। ভ্রমণ খরচ গড়ে ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতোই। খাবার, থাকা এবং ভ্রমণের খরচ নির্ভর করে স্থান এবং মৌসুমের উপর।